আরও শুনুন বা পড়ুন: লেবেদেফ: এক ফলকের একটু দেখাআতর যেত ঠাকুরবাড়ি, নবাবি মহলেওফোর্ট উইলিয়ামের খাঁচায় আওয়ধের নবাবরবি ঠাকুরের চিঠি, বার্থ কন্ট্রোল জরুরিজেনানা মহলে রাজপুত্র, কলকাতা তোলপাড়মল্লিকবাজার থেকে ট্রাম-লাইন যেখানে এলিয়ট রোডের দিকে বাঁক নিয়েছে, ঠিক তার উল্টো দিকেই নোনাপুকুর ট্রাম ডিপো। তখনকার দিনের লোয়ার সার্কুলার রোড, হালফিল আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড, সংক্ষেপে এ জে সি বোস রোডের ঠিক ওপরেই। এখন দেখতে ধূসর, সে ভাবে কোথাও ফলক-টলকে উল্লেখও করা নেই, কিন্তু এইটুকু জেনে রাখুন যে, জায়গাটি হিস্টরিক।
কেন হিস্টরিক, সে কথাই এ বার বলব। তার আগে একটু অন্য কথা। বিশেষ এই ট্রাম ডিপোটি ট্রাম ছাড়াও আরও নানা কারণে বেশ বিখ্যাত। ‘কাহানি’, ‘পিকু’ এমন আরও নানা ছবির শুটিংও হয়েছে এই ডিপোতে। বড় মাপের শুটিং চললে যা হয়, প্রচুর লোকজন এসেছে, একঝাঁক ‘স্টার’ এসেছেন, এসেছে ভ্যানিটি ভ্যান, হাজির হয়েছে একটার পর একটা জেনারেটর ভ্যান, যাতে লাইট-টাইট ঠিকমতো জ্বালানো যায়।
আসুন, আজকের এই গল্পটা জেনারেটর নিয়েই হোক। ভাবতেই পারেন, জেনারেটরের সঙ্গে কলকাতার, আরও ভেঙে বললে নোনাপুকুরের কী সম্পর্ক?
সম্পর্কটা এই যে, আপনি যখন ওই এলাকায় যাবেন, ঘোরাঘুরি করবেন, একটু খেয়াল করবেন তো, ট্রামডিপোর ঠিক লাগোয়া রাস্তায় আবছা হয়ে যাওয়া একটা বোর্ড দেখা যাচ্ছে কি না! সেখানে লেখা আছে ‘বিজলি রোড’।
খুঁজে পেলে ভালো, না পেলেও জেনে রাখুন, আপনি যেখানে দাঁড়িয়ে আছেন, কলকাতার তো বটেই, গোটা দেশের পাবলিক ট্রান্সপোর্টের ইতিহাসেই সেই জায়গাটির কথা চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
কারণ, নোনাপুকুর ট্রামডিপোতে তখনকার দিনের ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি বিদ্যুৎ তৈরির জন্য প্রথম একটি নিজস্ব জেনারেটর বসিয়েছিল।
ভাবতেই পারেন, এ আর এমন কী? উঁহু, ঠিক তা নয়।
কেন এই জেনারেটর বদলে দিয়েছিল তৎকালীন ভারতীয় রাজধানী শহরের ছবি, সেটা বুঝতে গেলে ইতিহাসে আরও একটু ডুব দিতে হবে।
আমরা সকলেই জানি, এক সময় কলকাতায় ট্রাম টানত ঘোড়া। ১৮৭৩-এর ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি শিয়ালদহ রেল স্টেশন থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত ঘোড়ায়-টানা ট্রাম চালু হল। গোড়ায় কোম্পানি চেয়েছিল, এই ট্রাম মালপত্রই বইবে, মানুষ নয়। বাস্তবে দেখা গেল, প্রথম দিন থেকে সেখানে মানুষই চড়েছে এবং প্রায় বিনা পয়সায়। ফলে মাত্র সাতটি মাস চালানোর পর লোকসান এতটাই যে, বন্ধ করে দিতে হল সেই ট্রাম সার্ভিস।
এগিয়ে আসুন আরও সাত বছর। ১৮৮০-র ১ নভেম্বর থেকে ফের নতুন করে ট্রামযাত্রা শুরু হল কলকাতায়। এ বারের বাহনও সেই ঘোড়া। প্রথমে চালানো হল সেই পুরনো পথেই, অর্থাৎ, শিয়ালদহ থেকে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত। তার পর একে একে চৌরঙ্গি রোড, চিৎপুর রোড, ধর্মতলা স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোড, শ্যামবাজার, খিদিরপুর, ওয়েলেসলি স্ট্রিট। তখন ব্রিটিশ রাজত্বের সাধের শহর কলকাতা। দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ বাসা করছে এই শহরে। পাল্লা দিয়ে ট্রামের জনপ্রিয়তাও বাড়তে লাগল। আরও নতুন নতুন রাস্তায় পৌঁছে গেল ট্রাম।