Kalpataru Utsab : তাঁর ভাণ্ডার ফুরায় না কখনও

fontIcon
Kalpataru Utsab
31 Dec 2023, 02:27:48 PM IST
Image Source: iStock

  • তিনি সাক্ষাৎ কল্পতরু
  • এমন কোনও দুরূহ দুর্গম পারমার্থিক বিষয় নেই, ঠাকুরকে দিয়ে যার দরজা না খুলিয়েছেন তাঁর ভক্তের দল

Kalpataru Utsav : ঠাকুর যেন দেবলোকের সেই কল্পতরু বৃক্ষ। অথবা কুবেরের ধন। কিংবা দেবমাতা সেই ভগবতী গাভী। যাঁদের ভাণ্ডার কখনও ফুরোয় না। নইলে এমন কোনও দুরূহ দুর্গম পারমার্থিক বিষয় নেই, পাগল ঠাকুরকে দিয়ে যার দ্বার-দরজা না খুলিয়েছেন তাঁর সঙ্গ ধন্যের দল।

এক ব্রাহ্ম ভক্তের ‘ঈশ্বর সাকার না নিরাকার’ প্রশ্নের উত্তরে ঠাকুর বলেন: ‘কিরকম জান। যেন সচ্চিদানন্দ সমুদ্র, কূলকিনারা নাই। ভক্তি হিমে স্থানে স্থানে জল বরফ হয়ে যায়— বরফ আকারে জমাট বাঁধে। অর্থাৎ ভক্তের কাছে তিনি ব্যক্ত ভাবে কখন কখন সাকার রূপ ধরে থাকেন। জ্ঞান সূর্য উঠলে সে বরফ গলে যায়, তখন আর ঈশ্বরকে ব্যক্তি বলে বোধ হয় না। তাঁর রূপও দর্শন হয় না। কি তিনি মুখে বলা যায় না। কে বলবে? যিনি বলবেন, তিনিই নাই। তাঁর আমি আর খুঁজে পান না। বিচার করতে করতে আমি-টামি আর কিছুই থাকে না। পেঁয়াজের প্রথমে লাল খোসা তুমি ছাড়ালে, তারপর সাদা পুরু খোসা। এইরূপ বরাবর ছাড়াতে ছাড়াতে ভিতরে কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না।’

অন্য এক ব্রাহ্ম ভক্ত ঠাকুরের কাছে কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলেন। ঈশ্বরকে দেখা যায় কি না? গেলে কী ভাবে? ঈশ্বরের স্বরূপ নিয়ে নানা মত কেন? এই সব। ঠাকুর এই সব ক’টি প্রশ্নেরই উত্তর দেন, জটিল নানা তত্ত্বের গায়ে ওঁর স্বপ্ন সম্ভব একেকটি উপমার আবরণ মুড়ে:

Spiritual


‘হ্যাঁ, অবশ্য দেখা যায়। সাকার রূপ দেখা যায়, আবার অরূপও দেখা যায়। তা তোমায় বুঝাব কেমন করে? ব্যাকুল হয়ে তাঁর জন্য কাঁদতে পার? লোকে ছেলের জন্য, স্ত্রীর জন্য, টাকার জন্য একঘটি কাঁদে। কিন্তু ঈশ্বরের জন্য কে কাঁদছে? যতক্ষণ ছেলে চুষি নিয়ে ভুলে থাকে, মা রান্নাবান্না, বাড়ির কাজ সব করে। ছেলের যখন চুষি আর ভাল লাগে না— চুষি ফেলে চিৎকার করে কাঁদে। তখন মা ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে দুড়দুড় করে এসে ছেলেকে কোলে লয়।... যে ব্যক্তি সদা-সর্বদা ঈশ্বর চিন্তা করে, সেই জানতে পারে তাঁর স্বরূপ কী। সে ব্যক্তিই জানে যে তিনি নানা রূপে দেখা দেন, নানা ভাবে দেখা দেন— তিনি সগুণ, আবার তিনি নির্গুণ। যে গাছতলায় থাকে, সেই জানে যে বহুরূপীর নানা রঙ— আবার কখন কখন কোনও রঙই থাকে না। অন্য লোক কেবল তর্ক ঝগড়া করে কষ্ট পায়। কবীর বলত, ‘নিরাকার আমার বাপ, সাকার আমার মা’। ভক্ত যে রূপটি ভালবাসে, সেই রূপেই তিনি দেখা দেন— তিনি যে ভক্তবৎসল। পুরাণে আছে, বীরভক্ত হনুমানের জন্য তিনি রামরূপ ধরেছিলেন।’

আর এর পরই অজ্ঞাত, অপরিমেয় অনন্তকে বোঝাতে গিয়ে শ্যামারূপ ও শ্যামরূপের যে-ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন ঠাকুর, তা শুনলে অতি বড় ভক্তেরও বুক কেঁপে যাবে এটুকু ভেবেই যে, ঠাকুরকে পুরোপুরি বোঝা কি অত চাট্টিখানি ব্যাপার! ওঁর মুখেই শোনা যাক, সে দিন ঠিক কী বলেছিলেন তিনি?

‘বেদান্ত-বিচারের কাছে রূপ টুপ উড়ে যায়।... যতক্ষণ ‘আমি ভক্ত’ এই অভিমান থাকে, ততক্ষণই ঈশ্বরের রূপদর্শন আর ঈশ্বরকে ব্যক্তি বলে বোধ সম্ভব হয়। বিচারের চক্ষে দেখলে ভক্তের ‘আমি’ অভিমান ভক্তকে একটু দূরে রেখেছে। কালীরূপ কি শ্যামরূপ চৌদ্দ পোয়া কেন? দূরে বলে। দূরে বলেই সূর্য ছোট দেখায়।... আবার কালীরূপ কি শ্যামরূপ শ্যামবর্ণ কেন? সেও দূর বলে... আকাশ দূরে দেখলে নীলবর্ণ, কাছে দেখ কোন রঙ নাই।... অনন্ত ঈশ্বরকে কি জানা যায়? তাঁকে জানবারই বা কি দরকার? এই দুর্লভ মানুষ জনম পেয়ে আমার দরকার তাঁর পাদপদ্মে যেন ভক্তি হয়।’ অর্থাৎ ভাবসাগরে ডুবে থাকা মা ভবতারিণীর যে-ছেলের সবচেয়ে বড় পরিচয় কি না মাতৃসাধক, তিনিই আবার স্পষ্ট বলছেন, যতক্ষণ নিজের ভক্তরূপের অভিমানটি থাকে, ততক্ষণই ঈশ্বরের রূপদর্শন হয় আর তাঁকে ব্যক্তি বোধ হয়। তার পর তাঁর আর আলাদা রূপ নেই। এও কি সম্ভব?

হ্যাঁ, সম্ভব। ওই যে ঠাকুর একবার বলেছিলেন, ‘আমায় সব ধর্ম একবার করে নিতে হয়েছিল—হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, শাক্ত, বৈষ্ণব, বেদান্ত।’ এই হল সেই উত্তর। পূর্ণব্রহ্মের কাছে চিরদিনই সব রহস্যের পাতা খোলা ছিল স্বচ্ছ শিশিরের মতন। নইলে ঠাকুর সেই ব্রাহ্ম ভক্তকে সে দিন শেষ কথাটি শোনাবেন কেন— ‘যদি আমার একঘটি জলে তৃষ্ণা যায়, পুকুরে কত জল আছে এ মাপবার কি দরকার?’ প্রণাম তোমায় ঘনশ্যাম!


Web Title:

Cossipore Udyan Bati| Dakshineswar Kali Temple| Kalpataru Utsav | Ramakrishna | Kalpataru Day | কল্পতরু উৎসব | কাশীপুর উদ্যানবাটী | দক্ষিণেশ্বর | রামকৃষ্ণ

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন