Insect Conservation : বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কিংবা বিরল প্রাণী রক্ষা করার ব্যাপারে সারা বিশ্বেই বিপুল তৎপরতা দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল কীট-পতঙ্গের প্রাণরক্ষা করা নিয়ে তেমন হইচই শুনতে পাওয়া যায় না। পশুপ্রেমী আছেন অনেক, তেমন জোরদার সংগঠনও আছে। কিন্তু কীট-পতঙ্গকে রক্ষা করার দাবিতে গলা ফাটাচ্ছেন বা কোথাও দাবি-দাওয়া তুলছেন এমনটা চোখে পড়ে না।
এমনকী অ্যানিমাল ওয়েলফেয়ার ল-এর আওতাতেও পড়ে না কীট-পতঙ্গ। তাই পশুর উপর অত্যাচারে যে আইনি বিপদ হতে পারে কীট-পতঙ্গে তা হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। অথচ মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে বিচার করলে বুঝতে পারা যাবে পতঙ্গের ব্যাপারে আমরা কতখানি উদাসীন। প্রতি বছর কম করে এক ট্রিলিয়ন সংখ্যক পতঙ্গ মারা যায় বিভিন্ন কারণে। সেখানে স্তন্যপায়ী প্রাণী ও পাখিদের বার্ষিক মৃত্যুর সংখ্যা ৭৯ বিলিয়ন। এদের বড় অংশটাই খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
নানা প্রাণীকে মেরে ফেলা, তাদের কষ্ট দেওয়া ইত্যাদি প্রশ্নে বরবারই পশুপ্রেমীরা সরব। কিন্তু পতঙ্গদেরও যে আঘাত লাগতে পারে, কষ্ট হতে পারে তা নিয়ে তেমন চর্চাই হয়নি। দীর্ঘ দিন পর্যন্ত মনে করা হয়েছে, প্রাণীর মধ্যে আঘাত লাগার যে অনুভূতি কাজ করে, তা পতঙ্গের ক্ষেত্রে প্রায় কাজই করে না। ধীরে ধীরে অবশ্য গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন যে পতঙ্গেরও আঘাত বোধ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনশোটির মতো উচ্চ পর্যায়ের গবেষণাপত্র জমা পড়েছে। কিছু সংখ্যক পতঙ্গের যে ব্যথার বোধ আছে, তা বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বিপুল সংখ্যক পতঙ্গ এমনও আছে যাদের ব্যথার বোধ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়নি।
কীটনাশকের কারণে প্রত্যেক বছর অর্বুদ অর্বুদ পতঙ্গ মরছে। এ ক্ষেত্রে শরীর পঙ্গু হয়ে, শ্বাসকষ্ট হয়ে এদের মৃত্যু হচ্ছে। পেস্ট কন্ট্রোলের ফলে কীট-পতঙ্গ মরছে। যদি ব্যথার বোধ থেকে থাকে, তবে কিন্তু এমন মৃত্যু ভীষণ যন্ত্রণার। কিন্তু এই যন্ত্রণা নিয়ে তেমন আলোচনাই নেই। কেন এই উদাসীনতা, তার একটা বহিরাঙ্গের কারণ অবশ্য আছে। প্রাচীন কাল থেকেই মনে করা হয় কীট-পতঙ্গের আয়ু ভীষণ কম দিনের। একটি প্রাণীর আয়ুর সঙ্গে তার কোনও তুলনাই হয় না। তাই এমনিতেই যা দুটো দিন পর মরে যাবে, তাকে আর একদিন আগে কীটনাশক দিয়ে মারলে কী আর এমন হবে! এই হল প্রচলিত যুক্তি। কিন্তু পতঙ্গের যন্ত্রণার অনুভূতি আর পাঁচটা প্রাণীরই মতো, এই ব্যাপারটা যত প্রমাণ হতে হতে এগোচ্ছে ততোই নতুন করে নড়েচড়ে বসার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে আঘাতের অনুভূতি রয়েছে কীটের মধ্যে। মানুষের মতো উন্নত প্রাণীর যেমন মস্তিষ্কে বিশেষ সেনসেশন তৈরি হয় আঘাতের কারণে, তেমনটা না হলেও পতঙ্গ অনুভূতিশূন্য নয়। যেমন অতি সম্প্রতি এক গবেষণায় ধরা পড়েছে যে উষ্ণ-শীতল, মিষ্টি-বিস্বাদের মতো বিষয়গুলি পতঙ্গ বুঝতে পারে। গবেষণাগারে কয়েকটি মৌমাছিকে চিনি মাখানো গরম খাবার এবং ঠান্ডা় খাবারের সামনে রাখা হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, গরম খাবার এড়িয়ে চলছে মৌমাছি। ঠান্ডা় খাবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আবার যে খাবারে চিনি মেশানো আছে, সেই মিষ্টত্বের দ্বারাও মৌমাছি আকৃষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মিষ্টিবিহীন খাবার থেকে মুখ সরিয়ে নিচ্ছে। এটা থেকে পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে মিষ্টির মতো স্বাদ কিংবা গরমের মতো অনুভূতি বোঝার ক্ষমতা আছে মৌমাছির।
আরও একটা ব্যাপার চর্চায় রয়েছে, তা হল গরমের অনুভূতি কিংবা মিষ্টত্বের স্বাদের স্মৃতি মৌমাছির মধ্যে জমা রয়েছে। সে কারণেই সে পরে আবার বিষয়টা চিনতে বা অনুভব করতে পারছে। আবার কিছু ব্যবহারগত প্যাটার্নও লক্ষ্য করা গিয়েছে মৌমাছির মতো পতঙ্গের ক্ষেত্রে। দেখা গিয়েছে, ক্ষুধার্ত মৌমাছি দ্রুত গতিতে খাবারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতখানি যদি সম্ভব হয় তা হলে ব্যথার অনুভূতিও যে এদের রয়েছে এতে আর বিস্ময় কোথায়!
এখন প্রশ্ন হল কীট-পতঙ্গের আঘাত পাওয়ার অনুভূতি যদি প্রমাণ হয়ে যায়, তা হলে কি পশুপ্রেমীরা এই নিয়েও আওয়াজ তুলবেন? ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার জন্য দায়ী মশা মারারই বা কী হবে?
পাঠ: শৌণক সান্যাল
Eisamay Gold/science/why is conservation of insects important