Kali Puja Special: অরণ্য-কুহকী -২

fontIcon
13 Nov 2023, 07:25:13 AM IST

  • জঙ্গলের পাশেই বাড়ি কিনেছেন দীপকবাবু
  • পাড়ার অনেকে তাঁকে ছেড়ে যেতে বলেন বাড়ি
  • পেশায় শিক্ষক দীপকবাবু তবু থাকেন সেই বাড়িতে
  • একদিন স্ত্রী শর্মিলার শরীর খারাপ হয়। ডাক্তার কী বললেন?
  • শুনুন কালী পুজো স্পেশাল Horror Story ‘অরণ্য-কুহকী’। আজ দ্বিতীয় পর্ব

আরও শুনুন বা পড়ুন:Kali Puja Special: অরণ্য-কুহকী





দেখতে দেখতে এই কোলিয়ারি অঞ্চলে থাকার মাসখানেক হয়ে গেল। দীপকবাবু শিক্ষক। কোলিয়ারি অঞ্চলের বাচ্চাকাচ্চাদের জন্য মাধ্যমিক অবধি একটা স্কুল আছে- সম্প্রতি সেখানকার প্রধান শিক্ষক হিসেবে তিনি কলকাতা থেকে বদলি হয়ে এসেছেন। জায়গাটা নির্ঝঞ্ঝাট। মাঝে মাঝে বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার উপদেশ তাঁকে শুনতে হয় বটে; কিন্তু সেটুকু গায়ে না মাখলে বাকি সমস্যা কিছু নেই। দীপকবাবু জানেন বাড়ি নিয়ে এসব গুজব ছড়ানোর প্রকৃত উদ্দেশ্য কী। নিশ্চয়ই ফাঁকা বাড়িতে ক্লাবের ছোঁড়াগুলো সন্ধেয় মদ-গাঁজার আসর বসায়। লোক এলে সেইসব


বন্ধ হয়ে যাবে কিনা, তাই এসব অবান্তর গুজব ছড়িয়ে বাড়ি ফাঁকা রেখে দেওয়ার তাল।


পিচরাস্তার পাশ থেকে শুরু হয়েছে রুক্ষ মাঠ। উঁচুনিচু সেই জমিতে নিজেদের মধ্যে নিরাপদ ব্যবধান রেখে দাঁড়িয়ে আছে কতকগুলো বাড়ি।পাড়াটা শেষ হয়েছে একটা মোড়ে--- যার ডানদিকের রাস্তা গিয়েছে স্টেশনের দিকে, বাঁদিকের রাস্তা গিয়েছে কয়লাখনির দিকে। আর রাস্তার এই বিভাজন পেরিয়ে মাথা তুললেই দেখা যাবে বুড়ির জঙ্গল। নিঃশব্দ প্রহরীর মতো ঘিরে রেখেছে পথের একপাশ।


দীপকবাবুর বাড়িটি এই মোড়ের মাথার শেষ বাড়ি। তাঁর আগের বাসাটিও কম করে একশো মিটার দূরত্বে রয়েছে। বুড়ির জ ঙ্গল থেকে যতখানি সরে থাকা যায় আর কী। তা অবাঞ্ছিত উপদ্রব যত কম হয় দীপকবাবুর ততই ভালো। কলকাতায় যখন ছিলেন- তখন সারাদিন ট্র্যাফিকের আওয়াজ, পড়শিদের হইহল্লা সহ্য করতে করতে মাথা গরম হয়ে যেত। এখন সারাদিন পাখির ডাক কানে আসে, দূর থেকে মিহি হয়ে ভেসে আসে ট্রেনের ভোঁ। বাজার-দোকান সবই এখান থেকে খানিকটা দূরে, ফলত মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচিও নেই বললেই চলে। দীপকবাবু ভেবেছেন অবসরের পর স্ত্রী-কে নিয়ে এখানেই পাকাপাকি থেকে যাবেন। চাকরিজীবনের তো আর ক’টা বছরই বাকি, পেনশন যা পাবেন, বুড়োবুড়ির দিব্যি চলে যাবে। মেয়ে, ছেলে দু’জনেই প্রবাসে


নিজেদের মতো প্রতিষ্ঠিত; তাঁরা ঝাড়া হাত-পা হয়ে বাকি জীবনটা এখানে কাটিয়ে দেবেন।


অসুবিধে একটু হয়েছে দীপকবাবুর স্ত্রী-র। ভদ্রমহিলা খুবই মিশুকে গোছের মানুষ। কলকাতায় থাকাকালীন হাউজিংয়ের সমস্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা; পুজোপার্বণে সকলকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানো; বাচ্চাদের গান শেখাতে শেখাতে বুঁদ হয়ে যাওয়া ছিল একরকম শর্মিলা মুখোপাধ্যায়ের সমার্থক। সেই মানুষটিকে এইরকম একটা প্রত্যন্ত জায়গায় নিয়ে আসা মানে পাহাড়ি অর্কিডের বীজ মরুভূমির একহাত বালির নিচে পুঁতে ফুলের আশা করা। স্বামী সকালে বেরিয়ে যান স্কুলে, মানুষটা সারাদিন একাই থাকেন। দীপকবাবু অসুবিধেটা বোঝেন। কিন্তু যে কোনও নতুন জায়গাতেই মানিয়ে নিতে সময় লাগে। স্ত্রী-কে একটা রেডিও কিনে দিয়েছেন তিনি। শর্মিলা গান-বাজনা বড় ভালোবাসে, অন্তত রেডিও শুনে সময়টা কেটে যাবে।


স্কুল শেষ হওয়ার পর দীপকবাবু বাড়ি ফিরে মাঝে মাঝে ছাদে আসেন। হেমন্তকাল। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সন্ধে হয়ে আসে। তাঁর ছাদ থেকে যতদূর চোখ যায়, ততদূর শুধু বুড়ির জঙ্গলে গাছের সারি। ছোটবড় গাছগুলো একে অপরের গায়ে গা ঠেকিয়ে তৈরি করেছে কচ্ছপের পিঠের মতো কাঠামো। একেবারে মাঝখানে দেখা যায় সব থেকে উঁচু পাকুড়গাছটার মাথা। গাঢ় সবুজে পড়ে পড়ন্ত রোদের কমলা সর। কতকগুলো শামুকখোর উড়ে যায় দিগন্তের দিকে। কমে আসা আলোয় জঙ্গলটিকে বড় একলা মনে হয়। স্কুলের সহশিক্ষক অসিতকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘জঙ্গলের নাম এরকম কেন গো?’ অসিত জানিয়েছিল ঘটনাটা। বহুবছর আগে জঙ্গলের প্রান্তে একটা বুড়ি থাকত। থুরথুরে। শীর্ণ চেহারা। নদীর স্রোত যেমন বালির পাড়ের গায়ে তৈরি করে অজস্র দাগ; কালতরঙ্গ তেমনই বুড়ির মুখে টেনে দিয়েছিল অজস্র খাঁজ। ঘোলাটে চোখে আর পড়ত না পৃথিবীর ছায়া। একটা তালিমারা ঝোলা আগলে সারাদিন বসে থাকত দাওয়ায়। কেউ এলে ডাকত, দুটো কথা বলার ফিকির করত। কেউ সাড়া দিত না। বুড়ির তিনকূলে কেউ ছিল না, কেবল ছিল যাবার দিনের অপেক্ষা। বুড়িকে অনেকেই ডাইনি বলে সন্দেহ করত। পাড়ার লোকে থেকে থেকেই অকথ্য অপমান করত। একদিন বুড়ি কাউকে কিছু না বলে চলে গেল। জঙ্গলের ঠিক আগে পড়েছিল তার মলিন সাদা শাড়ি, তালিমারা ঝোলা, সেফটিপিন দিয়ে আটকানো হাওয়াই চটি। কেউ খোঁজেনি; বরং সকলেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল।বুড়ির লজঝড়ে বাড়িটা ঝড়েপড়েছিল ভেঙে। আর ওই জঙ্গল কালে কালে হয়ে উঠল আরও গভীর।


লোকমুখে সে জঙ্গলের নাম হয়ে গেল ‘বুড়ির জঙ্গল’।


দীপকবাবু মনে মনে হাসেন। খনি থেকে গাছের শব তোলার জন্য যে জায়গার এত আয়োজন; তারা কতকগুলো সজীব গাছকে অপবাদ দিয়ে বংশানুক্রমিকভাবে দূরে সরিয়ে রেখেছে! মরে গেলে দাম বাড়ে এ কথা শুধুই মানুষের জন্য খাটে না; খাটে যে গাছের জন্যও--- এ বোধহয় এখানে না এলে এরকম রুক্ষভাবে দীপকবাবু শিখতেন না।


সন্ধের ঠিক মুখে যখন জঙ্গলের তলার দিকটা গাঢ় নীল হয়ে আসে; তখন একটু বুক ঢিপঢিপ করে বইকী। মোড়ের মাথায় ল্যাম্পপোস্টের আলোয় দেখা যায় দু-একজন সাইকেল আরোহী প্রাণপণ সাইকেল চালিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের নাগাল। হেমন্তের হাওয়ায় যে চোরা শৈত্য মিশে থাকে; সেই শিরশিরানিকে অবিকল প্রাচীন কোনও দৈত্যের নিশ্বাস মনে হয়। দীপকবাবু দ্রুতপায়ে ছাদ থেকে নেমে আসেন। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে শোনেন, রেডিওতে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে বাজছে পুরোনো হিন্দি গান। রফি আর আশার গলা থেকে ক্ষরিত হচ্ছে চিরকালীন আকুতি- ‘আভি না যাও ছোড় কর’…


হিমশীতল, বর্ষপ্রাচীন অভিশপ্ত এক নীলচে জঙ্গলের ধারে পুরোনো বাড়িতে এক প্রৌঢ় যুগল শোনেন প্রেমের গান। জানালা দিয়ে ঠিকরে আসে উষ্ণ হলুদ আলো। নির্মেঘ আকাশে খসে পড়ে দু-একটা তারা। মফস্সলে ধীরে ধীরে তিরতিরে ঠাণ্ডার রাত নেমে আসে। এক রাস্তার একপারে জ্বলে হলুদ আলো, শোনা যায় প্রেমের কথা; অপরদিকে কেবলই শুধু পাতার দীর্ঘশ্বাস।


তখন, বুড়ির জঙ্গলের এই ভয়াল রহস্যময়তার থেকেও, মহাবিশ্বকে ঢের, ঢের বেশি রহস্যময় মনে হয়।




শর্মিলার শরীরটা ক’দিন ধরেই ভালো যাচ্ছে না। জ্বর হয়েছে বেশ কয়েকদিন হল; সেটা কমার কোনও লক্ষণ নেই। কলকাতায় যেরকম চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত ছিল, এখানে তো তেমন নেই। একজন অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার বসেন বাজারে; তাঁকেই সন্ধেয় বাড়িতে ডেকেছিলেন দীপকবাবু। সিজন চেঞ্জের সময়ে ঠাণ্ডা লেগে জ্বর এসেছে- এমনই নিদান দিলেন তিনি। ‘আসলে গাঁ এলাকায় শীতটা বেশি পড়ে তো, ওঁর অভ্যেসও নেই। ফট করে ঠাণ্ডা লেগে গেছে। একটু সাবধানে রাখবেন, ওষুধপত্রগুলো দিচ্ছি। মনে করে খাওয়াবেন। আর…’


-'আর?’ আচমকা বাক্য অসম্পূর্ণ রাখায় হকচকিয়ে প্রতি-প্রশ্ন করলেন দীপকবাবু।


-'দেখুন’… একতলার সিঁড়ির সামনে টিমটিমে কমলা আলোয় দাঁড়িয়ে গলা খাঁকরালেন ডাক্তারবাবু। ‘শহরে থেকে আমরা অনেক কিছুই বিশ্বাস করি না স্যার। কিন্তু, আসলে এক্সপ্লেন করা যায় না এমন অনেক কিছু ঘটে। আমাদের চোখের সামনেই ঘটে। যখন হয়, তখন কিন্তু কিছু করার থাকে না।’


-;ঠিক বুঝলাম না।’ গলায় হেডমাস্টারসুলভ গাম্ভীর্য আনবার চেষ্টা করেও আনতে পারলেন না দীপকবাবু। বদলে নিঃসৃত হল খানিক অসহায়তা।


চুনকাম করা সাদা দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে ডাক্তারের মুখের বাঁ-দিকে পড়েছে কমলা আলো। গলার স্টেথোস্কোপ, যন্ত্রের ব্রিফকেস মিলিয়ে গিয়েছে সিঁড়ির আলো-আঁধারিতে। গমগমে গলায় তিনি বললেন, ‘আমার ভাইপোও আপনার স্কুলে পড়ে। আপনাকে ভয় দেখানো বা এই অবস্থায় রগড় করার কোনও ইচ্ছে আমার নেই বিশ্বাস করুন। এই জঙ্গলের হাওয়া সত্যিই ভালো নয় স্যার। প্রার্থনা করুন এই জ্বর যেন সত্যিই সিজন চেঞ্জের ঠাণ্ডা লেগে হয়। আর লোকে যা আশঙ্কা করে, তা যদি ফলে; তাহলে পৃথিবীর কোনও ডাক্তারের কোনও ওষুধেই কাজ হবে বলে মনে হয় না। উনি সেরে উঠলে বাড়িটা ছেড়ে দিন, অন্য ঘর দেখুন। এইটুকু আমার রিকোয়েস্ট।’ ডাক্তার বাইকে স্টার্ট দিলেন। ভট ভট শব্দ ছেড়ে বুলেট চলে গেল পাড়ার ভেতরে। উঠোনের দরজায় দাঁড়িয়ে রইলেন দীপক মুখোপাধ্যায়- অব্যাখ্যেয় রহস্যময় এক দ্বিধায় ডুবে। মাথার ভেতরে দৈববাণীর মতো ঘুরপাক খাচ্ছে ডাক্তারবাবুর উচ্চারণ করে যাওয়া শব্দগুলো।


ঘরে ফিরে এসে চুপ করে খাটে ঘুমন্ত শর্মিলার মাথার কাছে বসলেন দীপক। জানালা দিয়ে ভেসে আসছে হৈমন্তী চতুর্দশীর আলো। গাঢ় ঘুমে থাকা শর্মিলাকে দেখলেন তিনি। কবে এতটা বুড়িয়ে গেল শর্মি! কপালের শেষপ্রান্তে উঁকি দিচ্ছে ধূসর চুল। চোখের তলায় বলিরেখার গভীর খাঁজ। যে স্ত্রী-কে চিরযৌবনা বলে মনে করতেন দীপক- সেই স্ত্রী-র শরীরে বয়স বসিয়েছে থাবা।


স্ত্রী-র থেকে কি তাঁর এতটাই দূরত্ব হয়ে গিয়েছে যে যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বের পথে এগিয়ে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্বটুকু তিনি খেয়ালই করে উঠতে পারেননি! আজ, চেনা পরিপার্শ্ব থেকে বহুদূরে, চরাচর ভাসিয়ে দেওয়া চাঁদের আলোয় তিনি শায়িত স্ত্রী-র শরীর যেন নতুন করে আবিষ্কার করলেন। সে আবিষ্কারে প্রথম সঙ্গমের দিনে বিভাজিকায় জিভ ছোঁয়ানোর আশ্লেষ নেই; আছে পুরোনো সময়ের মোহ ভেঙে যাওয়ার অবিশ্বাস। একমাত্র অবিকল রয়ে গিয়েছে শর্মিলার নাভির পাশের তিল। দুধের সর-রঙা আলো এসে পড়েছে স্ত্রী-র কোমরে। আলুথালু শাড়িটা সরে গিয়ে ঝিনুকের মতো নাভিটি দৃশ্যমান হয়ে আছে। তার পাশে জ্বলজ্বল করছে শুকতারার মতো তিল। যে শর্মিলাকে বছর বিশেক আগেও শয্যায় চুম্বনে চুম্বনে ভরিয়ে দিতেন দীপকবাবু; সেই শর্মিলাকে কালপ্রবাহ তাঁর কাছ থেকে এতটাই দূরে সরিয়ে নিয়েছে- পাশের মহিলাকে প্রৌঢ়া শর্মিলার বদলে অন্য এক মানুষ বলেও চালিয়ে দেওয়া যায়। যুবতী শর্মিলা আর প্রৌঢ়া শর্মিলার মাঝে সেতু হয়ে রয়ে গিয়েছে শুধু এই তিল।


বাইরে তাকালেন দীপকবাবু। প্রায় গোল চাঁদের আলোয় জঙ্গলটাকে আগের থেকেও বেশি রহস্যময় মনে হচ্ছে। নাতিশীতোষ্ণ হাওয়ায় গাছগুলোর ওপরের অংশের পাতারা উঠছে কেঁপে কেঁপে; তৈরি করছে এক ভয়াল তরঙ্গ। বৃত্তাকার জঙ্গল যেন এক ঘুমন্ত রাক্ষসীর অনাবৃত স্তন, শিউরে শিউরে উঠছে অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে। আর তার ঠিক মাঝবরাবর বৃন্তের মতো জেগে আছে অমোঘ পাকুড় গাছ।


ময়ালজাতীয় সাপ নাকি শিকারকে ধরার আগে তাদের দিকে সটান তাকিয়ে বেঁধে ফেলে এক সম্মোহনপাশে। এই জঙ্গলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকলে সেরকম এক ঘোর লাগে।


মরণঘোর। বেশিক্ষণ না অপেক্ষা করে জানালাটা বন্ধ করে দিলেন দীপকবাবু।


ঘুমন্ত শর্মিলার পাশে শুয়ে কখন যে চোখটা লেগে এল কে জানে।



গল্প: রণদীপ নস্কর

কন্ঠ: অনির্বাণ ভট্টাচার্য

সূত্রধার: শৌণক সান্যাল

রেকর্ডিং ও সাউন্ড ডিজাইন: সুশান্ত দাস


গল্প রেট করুন