শুক্রবার খবর ছড়ায় এইমসে চিকিৎসা চলাকালীন নাকি মৃত্যু হয়েছে করোনা আক্রান্ত ডন ছোটা রাজনের। কিন্তু পরে দিল্লি পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ডনের মৃত্যু সংবাদ ভুয়ো। ছোটা রাজনকে নিয়ে বিভ্রান্তি বা ধোঁয়াশা কিন্তু নতুন নয়! আজ প্রথম পর্ব
ইঙ্গিতটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন ধনুষ্যকোডি শিবানন্দন। মুম্বইয়ের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার। ২০১৫ সালের অক্টোবর। ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে ছোটা রাজন গ্রেপ্তার হওয়ার পর তখন সবে কয়েক ঘণ্টা কেটেছে। কুখ্যাত ওই গ্যাংস্টার সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শিবানন্দন ঠারেঠোরে বুঝিয়েছিলেন, বহু বছর ধরে ছোটা রাজন কাজ করছে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা ‘র’-এর হয়ে! কিংবা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইনটেলিজেন্স ব্যুরো বা আইবি-র কয়েক জন অফিসারের অতি বিশ্বাসভাজন ওই রাজন।
এত বড় গ্যাংস্টার, মুম্বই তথা মহারাষ্ট্র পুলিশ এবং অবশ্যই ভারত সরকারের কার্যত ঘুম ছুটিয়ে দেওয়া গ্যাংস্টার কি না ‘র’-এর ছত্রচ্ছায়ায়! যুক্তিটা হলো, প্রথমে বস, তার পর চিরশত্রু দাউদ ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে ছোটা রাজনকে কাজে লাগানোর জন্যই এমন বন্দোবস্ত।
কিন্তু কী থেকে এমনটা আন্দাজ করা হচ্ছে?
প্রশ্নটা করায় মুম্বইয়ের প্রাক্তন সিপি শিবানন্দন আমাকে শুনিয়েছিলেন ২০০০ সালের নভেম্বর মাসের একটা ঘটনার কথা। শিবানন্দন তখন মুম্বই পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের যুগ্ম কমিশনার বা জয়েন্ট সিপি। সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসে ব্যাঙ্ককের সুখুমভিট সয়-এর চারন কোর্টে ছোটা রাজনের ফ্ল্যাটে ঢুকে হামলা চালায় দাউদ ইব্রাহিমের তরফে ছোটা শাকিল এবং আরও কয়েক জন। তলপেটে গুলি লাগলেও কোনও রকমে প্রাণে বেঁচে যায় ছোটা রাজন। ব্যাঙ্ককের সুখুমভিটেই সামিতিভেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয় তার। কিন্তু গুলির জখম ছিল গুরুতর। ওই হামলার দু’মাস পরেও তার তলপেটে বড় ও ভারী ব্যান্ডেজ, চলছে স্যালাইন ও অক্সিজেন। আর মুম্বই পুলিশের দল তাকে ধরতে আসছে বলে খবর পেয়ে ওই অবস্থাতেও হাসপাতাল থেকে নাকি পালিয়ে যায় ছোটা রাজন!
সত্যিই, বলিউডের ছবি কিংবা হালফিলের ওয়েব সিরিজের কাহিনিকারদের কল্পনাতেও এমনটা আসা মুশকিল।
শিবানন্দনের বক্তব্য ছিল, ‘এ রকম ঘটা আদৌ সম্ভব? আমাদের যে গল্পটা খাওয়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, তা হলো, দড়ি দিয়ে দেওয়াল বেয়ে হাসপাতালের ১৩-১৪ তলায় উঠে কে বা কারা ছোটা রাজনকে নিয়ে আবার ওই ভাবেই দড়ি দিয়ে দেওয়াল বেয়ে নেমেছে। হাস্যকর।’
বুঝতে পারছিলাম, কতটা বিরক্তি ও হতাশা শিবানন্দনের গলায়। এর পরে অবশ্য জানা যায়, ওটা ছিল তাইল্যান্ডের সেনাবাহিনীর অপারেশন। তারাই ছোটা রাজনকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছিল কম্বোডিয়া সীমান্তে।
শিবানন্দ বলেছিলেন, ‘ওই গোটা ঘটনায় ভারতের কোনও প্রভাবশালী পক্ষের হাত ছিল। তারা চায়নি, ছোটা রাজন তখন আমাদের হাতে আসুক।’ নাছোড় আমি জিজ্ঞেস করি, আপনি কি ‘র’ কিংবা আইবি-র কথা বলছেন? শিবানন্দর উত্তর ছিল, ‘আপনি সরাসরি ওদের জিজ্ঞেস করেই দেখুন না, ওরা কী বলে!’
এমনকী, সাড়ে পাঁচ বছর আগে ছোটা রাজনের গ্রেপ্তারিও তার সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দাদের একাংশের ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং’-এর ফসল, সেটাও বিভিন্ন সূত্রে বলা হয়। কারণ, সেই সময়ে ছোটা রাজনের সেই গুলির ক্ষত পুরোপুরি সারেনি, কিডনিরও সমস্যা।
আসলে ছোটা রাজন মানেই রহস্য। ধাঁধা। এখনও সেটাই চলছে। এখন, গত শুক্রবার থেকে রহস্য, তিনি জীবিত না মৃত, তা নিয়ে। শুক্রবার দুপুরে হঠাৎই রটে গেল, করোনায় আক্রান্ত, ৬৫ বছরের ছোটা রাজনের মৃত্যু হয়েছে। কিছুক্ষণ পর সরকারি ভাবে জানানো হলো, খবরটা ঠিক নয়। কিন্তু ছোটা রাজনের ব্যাপারে সরকারি ঘোষণাও কতটা ঠিক, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকে যায়।
পাঠ: শৌণক সান্যাল
Web Title:
ছোটা রাজন,Underworld don Chhota Rajan,Chhota Rajan,Chhota Rajan is deadcovid affected Chhota Rajan,Don Chhota Rajan