পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন?-৩

fontIcon
PURI iStock
30 Dec 2023, 12:55:55 PM IST
Image Source: iStock

 পুরীর রাজা সত্যবাদী গ্রামের বাবাজিকে খুন করে ফেলে দিয়েছিলেন

কিন্তু সে বেঁচে উঠে হাসপাতালে গেছে 

সেই নিয়ে শহর তোলপাড়

কী হয়েছিল? আজ তৃতীয় পর্ব 

আরও শুনুন বা পড়ুন:
পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন?
পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন? -২
পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন?-৪


মৃতপ্রায় সন্ন্যাসীর থেকে দারোগা কোনও রকমে একটা এজহার নিয়েই তাকে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। সমস্ত কিছু দেখে শুনে ডাক্তার সন্ন্যাসীকে জোলাপ দিলেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আগুনে ঝলসেছে সন্ন্যাসীর অঙ্গ। যন্ত্রণা নিবারণের জন্য ডাক্তার অতিমাত্রায় আফিম সেবন করাতে শুরু করেন সন্ন্যাসীকে। সে দিন রাত্রেই মলের সঙ্গে ৩৫ টুকুরো শোলা বেরিয়েছিল সন্ন্যাসীর শরীর থেকে। পরের দিন সকালবেলা আফিমের নেশা সত্ত্বেও সন্ন্যাসী যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। না তিনি ভালো করে বসতে পারছিলেন না ঘুমোতে। পুরীর ম্যাজিস্ট্রেট আর্মস্ট্রং সাহেব সেই অবস্থাতেই বাবাজীর জবানবন্দি নিতে শুরু করেন। এই ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সঙ্গেই আমলার কাজ করেন বাঙালি কবি নবীন সেন। নবীনবাবুর বয়ান অনুযায়ী, এই সাহেবের ‘মাথায় বিলক্ষণ ছিট’ ছিল। নবীন সেন লিখেছেন, দারোগা বাবাজীর কানের কাছে গিয়ে উচ্চস্বরে কিছু প্রশ্ন করছেন, কিন্তু সন্ন্যাসী তার শারীরিক অবস্থার কারণে কোনও প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিতে পারছিলেন না। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের সে দিকে হুঁশ নেই। তার এখনই জবানবন্দি চাই। দারোগার মুখ শুকিয়ে আসছিল ক্রমশ। কারণ তিনি বুঝতে পারছিলেন, ম্যাজিস্ট্রেট-এর এমন কাণ্ডের জন্য এই মোকদ্দমার ক্ষতি হচ্ছে।

দারোগা নবীন বাবুর কাছে জানতেন চান যে এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত। নবীন সেন স্পষ্ট ভাবেই জানান, দারোগা যেন ম্যাজিস্ট্রেটকে এই জবানবন্দি এখন নিতে না করেন। কিন্তু উত্তরে দারোগা যা বলেন তার মূল কথা হল- উনি একজন পুলিশ কর্মচারী হয়ে কী ভাবে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের কাজে হস্তক্ষেপ করবেন। বরং নবীনবাবু উচ্চপদস্থ মানুষ এবং সাহেব তাঁকে মান্যও করেন, তাই নবীনবাবু কিছু বললে হয়তো ফল হতে পারে। অগত্যা নবীন সেন তাঁর বক্তব্য সাহেবকে জানালেন। কিন্তু এতে আখেরে হিতে বিপরীত হল। সাহেব চেয়ার থেকে লাফিয়ে উঠে চিৎকার করে বললেন- তুমি আমার আসন নিতে চাও? নবীনবাবু সাহেবকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন যে, যে ভাবে জবানবন্দি নিচ্ছেন সাহেব, তাতে আদতে সরকারই আদালতে সমস্যায় পড়বে। কিন্তু নবীনবাবুর কোনও কথা শুনলেন না সাহেব।

jagganath istock


উনিশ শতকের অন্তভাগে এই উৎকল দেশে রাজার হাতে আর কোনও রাজনৈতিক ক্ষমতা নেই। রাজবাড়ির লোকেদের সন্দেহের চোখে দেখে শাসক শক্তি। তাদের সারাক্ষণ মনে হয় এই সব ক্ষমতাহীন দেশীয় লোকেরা ষড়যন্ত্র করছে ইংরেজদের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ রাজ উৎকল অধিকার করে রাজার জন্য মাসিক দু’হাজার টাকা পেনশনের ব্যবস্থা করেছিল। রাজার অধিকাংশ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল তারা। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব চান, যেন তেন প্রকারে রাজপরিবারের উত্তরাধিকারকে শেষ করে দিতে। কিন্তু সেই কাজ করতে গেলেও যে ধৈর্য চাই, এ কথা বিলক্ষণ বুঝে ছিলেন নবীন সেন। কিন্তু সাহেবের চিৎকার এবং ক্রোধ দেখে আর কিছু বলেন না নবীনবাবু। তিনি জানতেন এই মোকদ্দমার ভবিষ্যৎ কী হতে চলেছে।

বাবাজির অবস্থা খারাপ খারাপ হওয়া স্বত্বেও ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব আরও দু’বার জবানবন্দি নিয়ে, এই মোকদ্দমা সেশন আদালত কটকে প্রেরণ করলেন। মোকদ্দমার অবস্থা দেখে সরকারি উকিল এবং কমিশনারের চক্ষুস্থির। সরকারি উকিল কমিশনারের কাছে রিপোর্ট করলেন, মোকদ্দমার অবস্থা এমন শোচনীয় যে তা সেশন আদালতে টিকবেই না। কী ভাবছেন? এখানেই শেষ হয়ে গেল সব? না। এতও সহজে শেষ হতে পারে না সব কিছু, বরং এখান থেকেই নতুন গল্পের শুরু হল। কী হল? বলব পরের পর্বে।

পাঠ: শৌণক সান্যাল

Web Title:

story behind jagannath puri, king of puri killed babaji, king of puri, babaji of satyavadi village, babaji killed by king of puri

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন