পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন?-৪

fontIcon
PURI ONE iStock
31 Dec 2023, 02:15:37 PM IST
Image Source: iStock

নবীন সেন একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে সমুদ্রতীরের তাজা হাওয়া খেতে একটু বেরোবেন ভেবেছেন, আর ঠিক তখনই আরদালি এক ভীষণ দুঃসংবাদ নিয়ে হাজির হল। আরদালি জানাল, পুরীর রাজা সত্যবাদী গ্রামের বাবাজিকে খুন করে ফেলে দিয়েছিলেন, কিন্তু সে বেঁচে উঠে হাসপাতালে গেছে এবং সেই নিয়ে শহর তোলপাড় এখন। কী হয়েছিল? চতুর্থ পর্ব

আরও শুনুন বা পড়ুন:
পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন?
পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন? -২
পুরীর রাজার হাতে বাবাজি খুন! হাসপাতালে বেঁচে উঠলেন?-৩


সরকার বাহাদুর, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবের এমন কাণ্ডে খুব ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল। ম্যাজিস্ট্রেটও বুঝতে পারছিল যে এবার তিনি ফাঁসতে চলেছেন। কিন্তু সব থেকে যিনি বেশি সমস্যায় ছিলেন তিনি দারোগা সাহেব। সবাই শেষ পর্যন্ত পুলিশকেই ধরবে যে আসলে দারোগা ভালো করে মামলা সাজাতেই জানে না। দারোগা নবীনবাবুকে অনুরোধ করলেন এই মামলা গ্রহণ করার জন্য। শুধু দারোগা নয়, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেবও নবীনবাবুর কাছে মামলা গ্রহণের অনুরোধ করলেন। এ দিকে সমস্ত উড়িষ্যা জুড়ে একটা হইচই কাণ্ড। এই মামলা আর পাঁচটা মামলার মতো অত সহজ নয়। মানুষের ধর্মবিশ্বাস, ছলনা, আর লোভ সব কিছু জমে আছে এখানে। এই মামলার হার জিতের দিকে তাই লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকিয়ে ছিল সেদিন।

নবীন সেন এই মামলা গ্রহণ করলেন। কিন্তু মামলা পড়তে গিয়ে তার চক্ষুস্থির। একজন ম্যাজিস্ট্রেট কী করে এমন গলদ করতে পারে, তা বুঝতে বিশেষ বেগ পেতে হল নবীনবাবুকে। নবীনবাবু বুঝতে পারছিলেন, এই মোকদ্দমা কোনও ভাবেই সেশনে টিকবে না। কিন্তু সমস্যাটা হল, মামলা না টিকলে তো ম্যাজিস্ট্রেট নবীন সেনকে ছাড়বে না। জীবনের এই সন্ধিক্ষণে এসে নবীনবাবু নিজের চাকরি জীবনকে দাসত্ব ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারেননি। সমানে এগোলেও বিপদ আবার পিছোলেও বিপদ। অনেক ভেবে নবীনবাবু যখন বুঝলেন যে এর থেকে তার বেরোনোর কোনও উপায় নেই, তখন তিনি মন দিয়ে মামলার কাগজগুলি পড়তে শুরু করলেন। সমস্ত দলিল দস্তাবেজ পড়ে নবীন সেন দেখলেন যে, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব দুটি বড় ভুল করেছেন। তার মধ্যে একটি হল, বাবাজীর তিনবার জবানবন্দি গ্রহণ এবং সেখানে বিস্তর ভুলচুক করা। কিন্তু তার থেকেও যা বড় সমস্যা, তা হল, ১৫ দিন শরীরের সঙ্গে নানা ভাবে লড়াই করার পর সন্ন্যাসীর মৃত্যু ঘটেছে। আর এই মৃত্যুর কারণেই এই মামলাকে ঘিরে উত্তাপ এত বেশি ছড়িয়েছে। সন্ন্যাসী শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকলে হয়তো জল এতদূর নাও গড়াতে পারত।

কিন্তু কথাটা হল, এই বিভিন্ন রকমের জবানবন্দির জন্য মামলা ডিসমিস হওয়ার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি সে দিন। সন্ন্যাসীর জবানবন্দিই একমাত্র প্রমাণ। আর কোনও সাক্ষী নেই যে বলতে পারবে যে কুস্তিঘরে ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল। অন্যদিকে দ্বিতীয় ভুলটি ছিল, রাজকুমার সুদ্ধ ৯ জন আসামিকে সেশন আদালতে সমর্পণ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন হল, এই আটজন লোক যে রাজকুমারের সঙ্গেই ছিল তার কোনও প্রমান পেশ করতে পারেননি ম্যাজিস্ট্রেট। এই ৮ জন লোককে যে পুলিশ বাবাজির সামনে পেশ করেছিল চিহ্নিতকরণের জন্য তারও কোনও প্রমান নথির মধ্যে নেই। এমন অবস্থায় নবীন বাবু ঠিক করেন, যেমন করে হোক এই দু’টি সমস্যার সমাধান তাকে খুঁজে বের করতে হবে।

সেদিন আর কিছু না ভেবে ঘরে ফিরে আসেন নবীনবাবু। ঘরে হাহাকার পড়ে গেছে ততক্ষণে। সবাই জেনে গেছে, নবীনবাবু এই মামলা নিয়েছেন। স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। বাড়ির ভৃত্যেরা পর্যন্ত বলতে শুরু করেছে যে, নবীনবাবু যদি এই মামলা নেন তবে রাজকুমার খুন করবে তাকে। নবীন বাবুর নিস্তার নেই আর। ক্ষুব্ধ নবীনবাবু বলেন, তবে আর কী, চাকরি ছেড়ে বাড়ি যাই। ঠিক সেই সময় নবীনবাবুর পরম সুহৃদ ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মহানন্দ প্রবেশ করেন সেখানে। মহানন্দকে দেখে আশার আলো দেখতে পান নবীন সেন।

পাঠ: শৌণক সান্যাল

Web Title:

story behind jagannath puri, king of puri killed babaji, king of puri, babaji of satyavadi village, babaji killed by king of puri

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন