সব কিছুই হয়ে চলেছিল স্বাভাবিক নিয়মে। নারী-পুরুষ দু’জনে যৌন সংসর্গে লিপ্ত। ছেলেটির সুখ সপ্তমে, মেয়েটির তেমন নয়— তবে এক ঘণ্টার হিসেবে টাকা নিয়েছে সে। পুরোটা উসুল হওয়া অবধি ব্যাপারটা তো চলবেই! কিন্তু, শেষটা তেমন হল না। জেসি ক্যাম্পোস নামে এই ছেলেটি শেষ মুহূর্তে একটা বড় গোলমাল করে বসল।
ঝপ করে এগিয়ে যেতে হয় ন’মাস। দেখা যায়, নিউজিল্যান্ডের এক জেল থেকে বেরিয়ে আসছে জেসি। যৌনকর্মীর সঙ্গে সেই অন্তরঙ্গ মুহূর্ত তখনও তার কাছে যেন দুঃস্বপ্ন। সে দিন সংসর্গের পর অন্ধকার ঘর থেকে বেরিয়ে দু’জনে মিলে ন্যুড পার্টিতে যায় তারা। সেখানেই হঠাৎ মেয়েটির মেজাজ বিগড়ে যায়। সে কাউকে একটা ফোন করে। পুলিশ আসে। গ্রেফতার, বিচার, জেল। আচ্ছা শিক্ষা হয়ে গেল জেসির।
নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, টাকা নেওয়ার পরেও মেয়েটি কেন ফাঁসিয়ে দিল জেসিকে? দোষ কিন্তু আসলে জেসিরই ছিল। শুরুর আগে কন্ডোম ব্যবহারের কথা হয়েছিল। কথার খেলাপ করেনি জেসি। কিন্তু, ওই চরম মুহূর্তে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে তা খুলে ফেলে। এবং, মেয়েটিকে না-বলে। ওই পার্টিতে গিয়ে মেয়েটি তা বোঝে। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে অভিযোগ। ফলও হাতেনাতে।
Supreme court Verdict On Sex Work
মনে হতে পারে, এই সামান্য কারণে জেল? ‘সামান্য’ মনে হচ্ছে, কারণ আপনি ভারতের বাসিন্দা। বহু দেশেই এমন কথার খেলাপ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আইনি নাম ‘স্টেলথিং’। নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানির মতো বহু দেশেই এই অপরাধে কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। সম্প্রতি জার্মানিতেও এক পুলিশকর্মী এই অপরাধে কঠোর শাস্তি পেয়েছেন।
হিসেব বলছে, ২০ থেকে ৩০ বয়সি মেয়েদের প্রায় ১২ শতাংশ পুরুষসঙ্গীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে এমন প্রতারণার অভিযোগ করেছেন। দাম্পত্য সম্পর্কে এমন প্রতারণা হলে তা আরও বড় অপরাধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বলছে যে, ৮০ শতাংশ পুরুষই স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের সময়ে প্রতারণা করে থাকেন।
কিন্তু সঙ্গিনীর সঙ্গে ছেলেরা প্রতারণা করে কেন? বিশেষজ্ঞদের মত, রক্ষাকবচ পরে সঙ্গমে লিপ্ত হতে পুরুষ সে ভাবে সুখ পায় না। তারা বলে, এতে নাকি উত্তেজনা যথেষ্ট তৈরি হয় না। উপভোগের চরমে পৌঁছতে সঙ্গমের কোনও এক সময়ে তারা রক্ষাকবচ খুলে ফেলতে চায়। কিন্তু সঙ্গিনী যদি রাজি না হয়? তাই চেপে যাওয়াই ভালো— এমনই মনে হয় অনেকের! এমন মুহূর্তে মেয়েদেরও খেয়াল এড়িয়েই যায়। পরে তা জানতে পেরে অনেকে অভিযোগ করে, অনেকে করেও না। কিন্তু তাদের মনে খারাপ প্রভাব পড়ে, অদ্ভুত অস্বস্তি তৈরি হয়। অনেক সময় তারা অবসাদেও ভুগতে থাকে। সম্পর্কও নষ্ট হয়। অনেক সময়েই ডিভোর্সের কারণ হিসেবে যৌন প্রতারণার কথা শোনা যায়। কেউ কেউ স্টেলথিং-কে ধর্ষণের সমান অপরাধ বলেও দাবি করেন।
আমাদের দেশেও এই অপরাধ কম নয়। কিন্তু, সচেতনতার অভাবেই তা অপরাধের তালিকায় আসে না। মনোবিদদের মতে, বেশির ভাগ ভারতীয় পুরুষই যৌনতা উপভোগ সম্পূর্ণ নিজের অধিকার বলে মনে করে। তাই মেয়েদের অসুবিধের কথা তারা ভাবেই না। এখন অনেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণের কথা ভেবে কন্ডোম ব্যবহারের করলেও, অঙ্কের হিসেবে তা ক’জন? বরং, তারা সঙ্গিনীদের গর্ভনিরোধক ওষুধ ইত্যাদি খাওয়ার জন্য চাপ দেয়, যার সাইড এফেক্টে কত রকম যে রোগ হতে পারে, তার ইয়ত্তা নেই।
এ দেশে যাঁরা যৌন জীবন সম্পর্কে সচেতন, ইদানীং তাঁদের মধ্যেই স্টেলথিং নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু, সমাধান কোথায়? এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী যে দেশে প্রতি ঘণ্টায় মহিলাদের উপর গড়ে ৪৯টি অপরাধ হয়, সেখানে স্টেলথিং যে অপরাধ, এটা বুঝতেও বহু সময় গেলে যাওয়ারই কথা। কিন্তু, কত দিন? সেটাই এখন দেখার।
কন্ঠ: অবর্ণা রায়
Eisamay Gold/good life/stealthing is a serious crime in sex life