ফেলুদা’র নতুন রহস্য Crypto-Currency কেলেঙ্কারি

fontIcon
Bitcoin ONE iStock
14 Jul 2021, 07:00:00 PM IST
Image Source: iStock

কেসটা এল ফেলুদার কাছে। এক শেয়ার ব্যবসায়ী বন্দুকের গুলিতে খুন হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি বিটকয়েনে টাকা খাটাচ্ছিলেন। কোন ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, ঘর পরিপাটি, গুলির কোনও শব্দ কেউ পায়নি, ঘর থেকে চুরি গেছে শুধু তাঁর কম্পিউটার। এমন জম্পেশ কেস শুনে লালমোহনবাবু বইয়ের নামও ঠিক করে ফেলেছেন, ‘বিটমোহন লালকয়েন’।

‘কোভিডকালে দ্বিতীয় পুজো এসে গেল’, রবির সকালে একুশ রজনী সেন রোডে আগমন জটায়ুর। এমনিতে আমাদের যোগাযোগ সবসময় অনলাইনে। তবে কোভিড একটু কমায় ফেলুদা মাঝে মাঝে লালমোহনবাবুকে সশরীরে আগমনের অনুমতি দিচ্ছে। বেশি বয়সের সুবিধেয় ওনার দুটো টিকে হয়ে গেছে। পঁয়তাল্লিশ পেরোনোয় ফেলুদাও তাই। আমি শুধু একটা পেয়েছি।

তা এবার পুজোয় প্রখর রুদ্র কোথায়?’ হেঁটমুণ্ড ঊর্ধ্বপদ থেকে চিৎ হয়ে শবাসনের ফাঁকে ফেলুদার ছোট্ট প্রশ্ন। এখনও সকালের যোগব্যায়াম শেষ হয়নি। তবে এই তিন মিনিটের নৈঃশব্দ্যের পর মিটবে। সেই অবকাশে আমি অবশ্য কথা বলার সময় পাইনি।

এ বার অন্তর্জালে। পুরোটা কলকাতায় বসে সমাধান। চিন থেকে পাকিস্তানে পাচার হচ্ছে পারমাণবিক জীবাণু। টাকা পয়সার লেনদেন হচ্ছে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে। মানে বিটকয়েন। এই সময় টাকাটা জায়গামতো পৌঁছবে না। প্রখর রুদ্রের লেখা সফটওয়্যার ডার্ক ওয়েবে ঢুকে পড়ে সেই বিটকয়েনের দখল নেবে।’

লালমোহনবাবুর প্রযুক্তি মুখরতায় এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম যে প্লট পুরোটা মনে রাখতে পারিনি। তবে এর মধ্যে ভাগ্যিস ফেলুদার বিশ্রাম শেষ। সোজা সাবধান হয়ে দাঁড়িয়ে লালমোহন বাবুকে প্রশ্ন ছুড়ল ফেলুদা। সবই তো বুঝলাম। এমনকী জীবাণুতে যে পরমাণু থাকে, তাতেও আপত্তি নেই। কিন্তু ডার্ক ওয়েবে ঢুকে বিটকয়েনের দখলটা প্রখরবাবু কেমন করে পাচ্ছেন সেটা কি পাঠক পাঠিকাদের একটু বিশদে বলবেন?’

কেন? অসুবিধে কী? ক্রিপ্টঅ্যানালিসিস করে।’ মহাযুদ্ধে জটায়ু রণে ভঙ্গ দেওয়ার পাত্র নন।

‘গত পুজোর আগে আধাখ্যাঁচড়া ক্রিপ্টোলজি শিখে আপনি যে এ বার এই কীর্তি করবেন সে আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি। যাই হোক বিটকয়েনের বিষয়টা শুনলেন কবে?’

Bitcoin TWO iStock

‘গতসপ্তাহে একটু শেয়ার বাজার নিয়ে পড়াশোনা করছিলুম। আপনার দয়ায় এই অধম এখন অন্তর্জালে পারদর্শী। সেইসব খুঁজতে গিয়ে দেখি বিটকয়েনে টাকা ঢাললেও অনেকটা একই রকম। এই যেমন ধরুন গত এপ্রিলে এক বিটকয়েন প্রায় পঁয়তাল্লিশ লক্ষ টাকায় পৌঁছে গেছিল। জুলাইতে আবার নেমে পঁচিশ লক্ষের কাছাকাছি। প্রখর রুদ্র এ রকম একহাজার বিটকয়েন দখল করবে অন্তর্জালে। সেখানেই শেষ নয়। সবশেষে হিমালয়ের এক প্রত্যন্ত গুহায় খুঁজে পাবে সাতোশি-কে, যিনি কি না বিটকয়েনের স্রষ্টা। এতদিনে অবশ্য সাধু হয়ে গেছেন’।

‘সর্বনাশ করেছে। একেবারে সাতোশি পর্যন্ত পৌঁছে যাবেন প্রখরবাবু? এবার পুজোয় তা হলে অন্য লেখকদের আর ভাত জুটবে না।’

‘হেঁ হেঁ, সে তো আপনারই আশীর্বাদ স্যর।’

‘বুঝলাম। কিন্তু আপনার হিরো অন্যের বিটকয়েনের দখল নেবে কী ভাবে?’

‘কেন? দুশো ছাপ্পান্ন বিটের গোপন চাবিকাঠি, একটা প্রোগ্রাম লিখে একের পর এক মিলিয়ে গেলেই চলবে। যেই মিলবে সঙ্গে সঙ্গে চিচিং ফাঁক। শুধু ডিজিট কেন, আমি এখন বিট পর্যন্ত শিখে গেছি। কয়েনে পৌঁছতে আর দেরি কী?’

‘কতক্ষণ চলবে আপনার এই একাধারে সংকেতবিদ্যা এবং তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ প্রখর রুদ্রের লেখা ক্রিপ্টঅ্যানালিসিস-এর প্রোগ্রাম?’

‘কেন, এই ধরুন মিনিটখানেক’।, জটায়ুর স্মার্ট উত্তর।

‘এমন ভুল তথ্য কি না ছাপালেই নয়? আজকালকার বাচ্চারাও ধরে ফেলবে যে। খুব বেশি অঙ্ক কষে আপনাকে আর বিব্রত করছি না। পৃথিবীর সব কম্পিউটারকে কাজে লাগালেও কয়েক হাজার বছর লাগবে এই চাবিকাঠি খুঁজতে। তবে আপনার গল্পের গরু, রামরাজত্বে আপনি যে কোনও গাছে তুলতেই পারেন।’

‘তা হলে কি খুব বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে?’ এ বার একটু পিছু হটেছেন লালমোহন।

‘অনেকটাই। প্রোগ্রাম লিখে অন্যের বিটকয়েনের দখল নেওয়ার গল্পটা কল্পবিজ্ঞান ছাড়িয়ে একেবারে রূপকথা হয়ে যাবে। তবে বিটকয়েন আর সাতোশির গোটা ঘটনাটাই অনেকটা সেইরকম। ঘন অন্ধকারে। অনিশ্চয়তা তো বহমান ২০০৮ সাল থেকে, যখন বিটকয়েন ডট অরগ রেজিস্টার করা হয় ১৮ই অগস্ট। তেরো বছর কাটতে চলল। এর মধ্যে ২০১৯-এ আবার কিছুটা হইচই হয়েছিল সাতোশি নিজের পরিচয় প্রকাশ করবেন বলে। তার পর অবশ্য বোঝা যায় যে সেটাও একটা মিথ্যে। আগেও এমন অনেকবার হয়েছে। আর একটা অসমর্থিত খবর বলে সাতোশির কাছে রয়ে গেছে শুরুর সাত লক্ষ বিটকয়েন। কিন্তু যে কম্পিউটারে গোপন চাবিকাঠিগুলো লেখা ছিল, তার হার্ডডিস্ক নাকি খারাপ হয়ে যায়। আপনি বরং এই জায়গাটা ধরুন। গল্প ফাঁদুন সেই হার্ডডিস্ক আসলে খারাপ হয়নি, আর তা পাচার হচ্ছে খাইবার পাস দিয়ে। সেখানেই উপস্থিত প্রখর রুদ্র’।

‘সর্বনাশ! খাইবার পাস! দেখেছেন কথায় কথায় আর একটু হলে কচুরিটার কথা ভুলেই যেতাম। শিগগিরি শ্রীনাথকে বলুন তিনটে প্লেট দিতে।’

লালমোহনবাবুর ঝোলা থেকে বেরোল ঠোঙায় ভরা কচুরি আর ভাঁড় ভর্তি তরকারি, ধোঁয়া ওঠা। ভাগাভাগির মধ্যেই বেজে উঠল ফেলুদার মুঠোফোন। গম্ভীর মুখে হুঁ-হাঁ করতে করতে আঙুল দিয়ে কচুরি ভাঙল ফেলুদা। কথা শেষে আমার দিকে না তাকিয়েই বলল, ‘সারা দিনের জন্যে রেডি হয়ে নে তোপসে। আজকে লাঞ্চ বাইরে’। তার পর জটায়ুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন, ‘হরিপদবাবুকে বলে গাড়িতে বেশি করে তেল ভরে রেখেছেন তো? নাকি একশো পেরোনোয় এখন বিটকয়েনে পেট্রোলের দাম মেটানোর কথা ভাবছেন? চলুন এখনই বেরোতে হবে। বর্ধমানে মোহন লাল বলে এক শেয়ার ব্যবসায়ী গতকাল রাতে বন্দুকের গুলিতে খুন হয়েছেন। সম্প্রতি তিনি নাকি বিটকয়েনে টাকা খাটাচ্ছিলেন। কোন ধস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, ঘর পরিপাটি, গুলির কোনও শব্দ কেউ পায়নি, আর ঘর থেকে চুরি গেছে শুধু তাঁর কম্পিউটার’।

মুখের ভেতর আধ চেবানো খোসাওলা আলুর তরকারি আর গরম কচুরি কোঁত করে গিলে নিলেন লালমোহনবাবু। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন, ‘বইয়ের নামটা জম্পেশ হবে তপেশ ভাই, বিটমোহন লালকয়েন’।

পাঠ: বৈজয়ন্ত চক্রবর্তী

Web Title:

Feluda books in Bengali,Feluda books,Feluda series,Mysteries and Feluda,Feluda Audio series in Bengali,Cryptocurrency Scandal, Feluda New Mystery, lalmohan, Tapse, satyajit Ray

(Bengali podcast on Eisamay Gold)

গল্প রেট করুন